বিজ্ঞানময় পবিত্র মাহে রমজান।

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাই এতে স্বাস্থ্যনীতিও রয়েছে।ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা। ইসলামী শরীয়তে প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও শারীরিক-মানসিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সিয়াম পালন বা রোজা রাখা ফরজ।

ইসলামি দৃষ্টিকোন থেকে রোজা রাখার ফলে যেমন মহান আল্লাহর অশেষ নৈকট্য লাভ করা যায় তেমনি রোজা রাখার ফলে ইহকালীন কল্যাণ সাধনও হয় যথেষ্ট। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের ফলে একটি সুস্থ-সুন্দর জীবন অতিবাহিত করা যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মানুষের কাছে যে বৈজ্ঞানিক তথ্য ছিল অজানা, আজ বিজ্ঞান রোজার উপকারিতা বর্ণনা করে মানুষকে সিয়াম সাধনার জন্য উৎসাহিত করছে।

রোজা সম্পর্কে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ পিজি স্পাসকি বলেন, রোজার মাধ্যমে কালাজ্বর ও শরীরের অন্যান্য পুরাতন রোগ কোন মেডিসিন ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
জার্মান ডাক্তার ফেডারিক হ্যানিম্যান বলেন, রোজার মাধ্যমে মৃগী রোগ ও আলসারের চিকিত্‍সা করা যায়। এছাড়াও পেটের অসুখ, অজীর্ণ, বদহজম, গ্যাস্ট্রিকের চিকিত্‍সাও করা যায়।

ডা. বেন কিম তাঁর Fasting for health প্রবন্ধে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র‌্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহজনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ (Repair) এবং সুগঠিত হতে পর্যন্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষতঃ খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার দেহে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে। সাধারণতঃ দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্থপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দুরারোগ্য (Auto, une disease) সব ব্যাধির সৃষ্টি করে। ডা. বেন কিম আরো বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন উপবাসে কিভাবে দেহের সবতন্ত্রে (system) স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।

ডক্টর ডিউই বলেছেন, “রোগজীর্ণ এবং রোগকিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেলো, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।” তাই একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন।

এছাড়া রোজা রাখার ফলে শরীরের আরো অনেক উপকারিতাও মেলে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে – ওজন কমাতে সাহায্য করে,ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে,উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে,পেশীশক্তি সংরক্ষণ করে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, প্রদাহজনিত রোগ এবং অ্যালার্জির সারাতে সহায়তা করে,মানসিক স্বচ্ছতা দেয়।

পবিত্র রমজানের অন্যতম একটি ইবাদত তারাবি নিয়েও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা থেমে নেই। মিসরের শিক্ষিকা ডাক্তার সালওয়া রুশদি ৬০ বছর বয়সের বেশি নারী-পুরুষের ওপর চার বছরব্যাপী এক মাস করে গবেষণা করে দেখেন, তারাবি নামাজ হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও শরীরের পেশি মজবুত করে। মেরুদণ্ডসহ শরীরের অন্যান্য সংযোগস্থল নমনীয় করে ও রক্তপ্রবাহকে অধিক ক্রিয়াশীল করে। তারাবিতে বেশি রুকু ও সিজদার ফলে রক্ত চলাচল ও শ্বাস গ্রহণ প্রক্রিয়ার উন্নতি হয়। গবেষকরা আরও বলেন-পিঠে, জয়েন্টে ও মাংসপেশিতে যত ব্যথাই থাকুক না কেন; তার উচিত তারাবি পড়া।

এভাবে ইসলামের প্রতিটি বিধান নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিজ্ঞানের উন্নতিতে আজ পুরো পৃথিবী জানতে পারছে, ইসলামই হচ্ছে সুখ ও কল্যাণের চাবিকাঠি। আসুন, জীবনে সফলতা লাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখার নিয়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। আর তাতেই নিহিত আছে মানুষের আরোগ্যলাভের গোপন রহস্য। সিয়াম সাধনায় আমরা হব স্বাস্থ্যবান ও পবিত্র আত্মার অধিকারী।

তথ্যসূত্রঃ- ইন্টারনেট

     আরো পড়ুনঃ

পুরাতন খবর:

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১